অযত্ন-অবহেলায় প্রাণহীন রামু বোটানিক্যাল গার্ডেন

বিশেষ প্রতিবেদক •

কক্সবাজারের একমাত্র বোটানিক্যাল গার্ডেন অযত্নে অবহেলায় ও বাজেট বরাদ্দ না থাকায় সৌন্দর্য হারাতে বসেছে। গার্ডেনটি অপরূপ সাজে সজ্জিত থেকে পর্যটক ও শিশু কিশোরদের কোলাহলে মুখর থাকার কথা ছিল। কিন্তু সেই বোটানিক্যাল গার্ডেন বর্তমানে প্রাণহীন হয়ে পড়ে আছে।

প্রতিষ্ঠার ৯ বছরের মাথায়ও মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারেনি পরিত্যক্ত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়া গার্ডেনটি। রামু উপজেলার রাজারকূল এলাকায় গড়ে ওঠা এ বিনোদন কেন্দ্রটি অযত্ন-অবহেলায় দিনে দিনে জৌলুস হারাচ্ছে। কমেছে দর্শনার্থীর সংখ্যাও। কর্তৃপক্ষ বলছে, লোকবল সংকট, অর্থাভাবসহ নানা কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার ও পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন পর্যটন স্পট থাকলেও শিশুকিশোর প্রকৃতি প্রেমীদের বিনোদনের জন্য নেই কোনো পার্ক বা চিত্ত বিনোদন কেন্দ্র। কক্সবাজার শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে রম্য ভূমি রামুর রাজারকূলে বোটানিক্যাল গার্ডেনটি গড়ে তোলা হলেও যথাযথ পরিচর্যা না থাকায় এখন জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। এতে করে বোটানিক্যাল গার্ডেনটি পরিত্যক্ত ও অকার্যকর হয়ে পড়েছে। দেশি-বিদেশি পর্যটক, শিক্ষার্থী ও কোমলমতি শিশুকিশোররা বিনোদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

বোটানিক্যাল গার্ডেনটি ২০১৩ সালের ৫ জুলাই কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগ রামু উপজেলার রাজারকূল বনভূমির ৬৫ একর জায়গায় গড়ে তোলা হয়। তবে লোকবল সংকট ও অর্থাভাবে তা এখন পরিত্যক্ত হওয়ার পথে। যে উদ্দেশ্য লক্ষ্য নিয়ে গার্ডেন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল সে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

বোটানিক্যাল গার্ডেনে গিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন জাতের ফুল ও ফলের গাছের বদলে এখন জায়গা করে নিচ্ছে জঙ্গল। চারদিকে স্তূপ করে রাখা হয়েছে বনবিভাগের কাটা গাছ। এসব কারণে পর্যটকসহ স্থানীয়রাও সেখানে যাওয়ার আগ্রহ হারাচ্ছেন।

রামু বোটালিক্যাল গার্ডেনে বেড়াতে কয়েকজন শিক্ষার্থী ও পর্যটক বলেন, অনেক আগ্রহ নিয়ে এই গার্ডেনে এসেছি। কিন্তু এখানে দেখার মতো কিছু নেই। একসময় যে ফুলের বাগান ছিল তা এখন আর নেই।

ঢাকা থেকে প্রকৃতি প্রেমী শিক্ষক নাঈমা রহমান ‘একদল শিক্ষার্থী নিয়ে রামু বোটানিক্যাল গার্ডেন দেখতে যান। সেখানে গিয়ে বোটানিক্যাল গার্ডেনের দৈন্যদশায় তিনি খুবই হতাশ হয়ে বলেন, মাত্র তিন বছর আগেও এত বাজে অবস্থা ছিল না। তখন ফুলও হরেকরকম সারিবদ্ধ গাছ পালা ছিল, ছিল নানা ধরনের জীববৈচিত্র যা এখন আর নেই। বিভিন্ন প্রজাতির গার্ডেনে ফুলের যে বাগানগুলো ছিল, তা নেই। পুরো গার্ডেনে বনবিভাগের নিলামের জন্য রাখা গাছের স্তূপ।

পার্কে ঘুরতে আসা কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী সাদেক মাহমুদ শিমরান বলেন, কয়েক বছর আগেও এখানে দেখার মতো অনেক কিছু ছিল। কিন্তু এই কয়েকবছরের ব্যবধানে গার্ডেনটি একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। এখানে দেখার মতো কিছুই নেই।

বোটানিক্যাল গার্ডেনের সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে গার্ডেনের দায়িত্বপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা নাজমুল হোসেন বলেন, রামুতে বোটানিক্যাল গার্ডেনটি প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর কোনো বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। এ গার্ডেনটি দীর্ঘদিন আগে প্রতিষ্ঠিত হলেও এখন পর্যন্ত গেজেটভুক্ত না হওয়ায় দর্শনার্থীদের কাছ থেকে টিকেট ফি নেওয়ার অনুমতি পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। লোকবলের অভাবে পুরো বোটানিক্যাল গার্ডেন জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। বাজেট পেলে বাগানের কাজ পুরোদমে শুরু হবে। এই গার্ডেন ২০০ একরে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে।

কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. সরওয়ার আলম বলেন, কক্সবাজার শহর থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে মনোমুগ্ধকর এই বোটানিক্যাল গার্ডেনটি প্রস্তাবিত দুইশ’একরে উন্নীত করে গাছপালা ফলে ফুলে সমৃদ্ধি করে প্রস্তুত করা হলে কক্সবাজারে আগত দেশি-বিদেশি পর্যটকদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বোটানিক্যাল গার্ডেন না দেখে ফিরে যাবে না।

শুধু তাই নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিক্ষা সফরে আসা শিক্ষার্থী, শিক্ষক, গবেষক, কবি সাহিত্যিক নির্জন কোলাহল মুক্ত নিরিবিলি প্রাকৃতিক নৈসর্গিক দৃশ্য উপভোগ করতে বারবার ছুটে আসতেন রম্যভূমি রামুর এই বোটানিক্যাল গার্ডেনে। দর্শনার্থীদের জন্য ফি নির্ধারণ করা হলে প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণ রাজস্ব আদায় হতো। তাই এই বোটানিক্যাল গার্ডেন সুন্দর আকর্ষণীয় রূপে সাজিয়ে প্রস্তুত করা হলে পর্যটকদের বাঁধ ভাঙা উচ্ছ্বাসে সারাবছর মুখর থাকবে।